লাভা যাবি ?
লাভা যাবি ? লোকাল ট্রেন ! তীব্র শব্দ ! বিনা পয়সার গন্ধ , ছোটলোকি গুতোগুতি ও ঝগড়া ! পাশের লোকের ছুয়ে যাওয়া স্পর্শ অত্যাচার ! এসব গায়ে মেখে আল্লাদে আটখানা হয়ে আমি অফিস ফিরছি ! এখন হটাৎ লাভা মানে আগ্নেয়গিরি দেখার ইচ্ছে ? না।! সেরকম কোনো প্রেম জাগছিল না !
আগ্নেয়গিরি ! এর আগে বহুবার দেখতে ইচ্ছে করেছে যদিও ! জীবন্ত আগ্নেয়গিরি দেখা যায় না শুনেছি ! মানে পাশে যাওয়াটা বিপদজনক ! একমাত্র জাপানের সাকুরাজিমাতে , শুনেছি , আগ্নেয়গিরি সবসময় জীবন্ত। সবসময় অল্প অল্প লাভা বেরচ্ছে , ছাই উড়ছে। কিন্তু একটা বিশাল বড় রিয়েল-এস্টেট কোম্পানির ছোট্ট খুচরো আর্কিটেক্ট আমি। জীবন্ত আগ্নেয়গিরি দেখার গোপন প্রেম মনে বাসা বাধেনি কখন!
লোকাল ট্রেনের বিকট শব্দ ও গন্ধ , আমার অসহায় ছোট্ট আর্কিটেক্ট ক্যারিয়ার , সস্তা ফোনের নেটওয়ার্ক; আগ্নেয়গিরি দেখার এই আমুদে প্রস্তাব , আমি আমতা আমতা করে সরাসারি স্পষ্ট “না” করতে যাচ্ছিলাম ! জয় ওপাশ থেকে ! বেশ প্রত্যয়ের সুরে –
লাভা মানে উত্তরবঙ্গ ! আমাদের প্রিয় উত্তরবঙ্গ !
লাভা ! আগ্নেয়গিরি না বোকা ! লাভা মানে উত্তরবঙ্গ ! আমাদের প্রিয় উত্তরবঙ্গ ! একটা ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম ! অনেক উঁচু ! দার্জিলিঙের থেকেও ! খালি মেঘ উড়ে যায় ! সাক্ষী থাকে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু পাইন , ওক , ঝাউ গাছের সারি ! পাহাড়ের দ্বিখণ্ডিত দুই পাশে। সেভাবে কিছু নেই দেখার ! এই না থাকাটাই এখানকার সৌন্দর্য্য ! মাধুর্য্য ! না থাকা, না পাওয়ার কাছে সর্বসান্ত হওয়া যায় ! নিঃশর্ত সমর্পনের সৌন্দর্যই আলাদা !
তাই তো তিব্বতী বুদ্ধ ভিক্ষুকরা এখানে, এই বোকা, তুচ্ছ, নগন্য, নগ্ন গ্রামে গড়ে তোলে বুদ্ধ মনাস্ট্রি। কোলাহল থেকে দূরে। সভ্যতা থেকে দূরে। খবরের কাগজ, প্রতিদিনের মাছ, মাংস, তরকারি , ঈর্ষা , লোভ, ভয় কোনটাই ভালো ভাবে পৌছায় না। মাত্র ২০০০ লোকের বসবাস। এখানেই আছে ঈশ্বরের সাথে কথা বলার টেলিফোন। একের সাথে এক। লড়াই নয়। বন্ধুত্ব। একের বিপক্ষে এক শান্তি ! শান্তির পক্ষে শান্তি। তিব্বতীরা এই জনপদের নাম দিল “লাভা ” . মানে , তিব্বতি ভাষায় , “ঈশ্বরের বাড়ি” .
৩৫০০ মিটার উঁচুতে দার্জিলিং ! তার থেকেও ২০০ মিটার উঁচুতে লাভা।
৩৫০০ মিটার উঁচুতে দার্জিলিং ! তার থেকেও ২০০ মিটার উঁচুতে লাভা। লাভা এত উঁচু , এতো নৈসর্গিক , এতো নগ্ন – এখানে শব্দরা কথা বলতে পারে না ! কানে ধাপা ধরে যায় ! খালি আকাশ ছাপিয়ে পত পত করে উড়তে থাকে সূর্য , সাথে পাইন , জুনিপার , ব্রীচ গাছের তন্বী ডাল ও মাথা ! ঋত্বিক ঘটকের সেই মেঘে ঢাকা তারা – ” দাদা আমি বাচতে চাই ” – সেই দুরন্ত দৃশ্য চোখে ভাসবে রে ! ছোট ছোট গাছ , লতা পাতা , উদ্ভিদ ও পরজীবীদের নিয়ে, লাভার কোল ঘেষে গড়ে উঠেছে একসবুজ মহানগর – নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক। এখানে পৃথিবীর সব সবুজ রং এসে জড়ো হয়েছে। এতো ঘন সবুজ এই বন। ওপরে, পাহাড় চুড়োতে জমে|
আছে সাদা সাদা বরফ ! হাসির মতো তারা নির্ভেজাল আনন্দে আত্মহারা। নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক ঘিরে আছে পূর্বপুরুষের মতো পুরোনো প্রাচীন কালো পাহাড় । তাদের গা থেকে গড়িয়ে পড়ছে ঝর্ণা। গড়িয়ে পড়া ঝর্ণার যুবতী শব্দ . তোকে নিয়ে যাবে যেখানে কেউ যায় না কোনোদিন। যেন তুমি লাভ করছ মহাপরিনির্বাণ ! এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য ও এখানকার মানুষের হাসি তোমাকে লাভার প্রেমে ফেলবে। লাভা বিখ্যাত ট্রেকিং, হাইকিং ও ক্লাইম্বিংয়ের জন্য। এখানে আছে অনেকগুলো বিখ্যাত ট্রেকিং রুট।
মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে সুন্দর , নাগরিক কালিম্পঙ শহর।
স্কুল ছুটি হলে মেঘ উড়ে যায় এক ডাল থেকে আরেক ডালে! এখানে সব মেঘেদের নামে রাস্তা আছে ! এখানে কোনো গাছ মারা গেলে কবিতা পরে কয়েকশ পাখি ! শোক বিহ্বল হয়ে পরে মোনাস্টির সমস্ত বুদ্ধ ভিক্ষুক। মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে সুন্দর , নাগরিক কালিম্পঙ শহর। যেখানে ইচ্ছে করলে সব পাওয়া যায় – নাগরিক আরাম , খাবার , পয়সা , ফ্যাশন , দিনের ও রাতের বাঁশি ! তবু অনেক সমীক্ষা বলছে বর্তমান পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা লাভা। ৭০ শতাংশের বেশী পর্যটক তিনবছরের মধ্যেই আবার আবার লাভা ঘুরতে আসতে চায়। যেখানে কালিম্পঙ চায় মাত্র ২৬ শতাংশ। সমীক্ষা আরও বলছে বাঙালি পর্যটদের কাছে দার্জিলিং এর পরেই হিমালয়ের পাদদেশে সবচেয়ে প্রিয় ভ্রমণ স্থান !
লাভা মানে ঈশ্বরের বাড়ি। একটি অফ-বীট মিষ্টি পাহাড়ি জনপদ। কালিম্পঙ জেলা। পাইন গাছে ঘেরা। মনাস্ট্রি , অল্প কিছু বাড়ি , অনেক উঁচু ও অনেক ঠান্ডা। দার্জিলিঙের থেকে ওপরে। লাভা মানে পাইন গাছের ফাঁকে স্মৃতি। স্কুল ফেরত পাখিদের হুল্লোড়। এখানে সব মেঘেদের নামে রাস্তা আছে। সব রাস্তার আছে আশিয়ানা ফেরার টান.
লাভা মনেস্ট্রির পাশে অবস্থিত হোটেল আশিয়ানা দিচ্ছে ৩০ % ছাড় –
ফেব্রুয়ারী মাসে ( ১ থেকে ২৯)
মাথাপিছু মাত্র ৯৯৯ টাকা – , সাথে ব্রেকফাস্ট ও ডিনার।
ফোন করুন বুক করুন : 98000 52576